কাপড়কে সাদা ও ঝলমলে রাখতে বিশেষ কোন দামী জিনিসের প্রয়োজন পড়ে না। বরং কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। কাপড় দীর্ঘদিন সুন্দর ও পরিপাটি রাখতে হলে আপনাকে কাপড়ের যত্ন নিন।
কাপড়ের যত্নের কিছু অভ্যাস ও নির্দেশিকা নিয়ে আজকের এই লেখাটি।

১০টি উপায় অবলম্বন করে কিভাবে আপনি আপনার কাপড়ের যত্ন নিবেন এবং দীর্ঘস্থায়ী করে তুলবেন-

১। মানসম্মত কাপড় কেনাঃ আমি আপনাকে বেশী দামী ও নামকরা ব্র্যান্ডের জামা কাপড় কিনতে বলব না। বরং আপনি একটু মানসম্মত জামা কাপড় কিনুন এটিই হবে ভালো কাজ। আপনি ভালো মানের একটি ওয়ারড্রোব ব্যবহার করবেন এতে আপনার কাপড় দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
বাচ্চাদের কাপড় কিনার সময় একটা বিষয় মাথায় আসে সেটা হল কোয়ালিটি ভার্সেস কোয়ান্টিটি। এ ক্ষেত্রে আপনি কোয়ান্টিটির ক্ষেত্রে বেশী নজর দিবেন। কারণ, বাচ্চাদের কাপড় বেশী দিন পরানো যায় না। কারণ, বাচ্চারা বেড়ে ওঠে তাড়াতাড়ি।
যখন আপনি বড়দের কাপড় কিনবেন তখন কোয়ালিটি সম্পন্ন কাপড় কেনাই উত্তম। শুধু বেশী দাম দিয়ে কাপড় কিনলেই ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায় না।
ভালো মানের জামা কাপড় কেনার সময় কাপড়ের সেলাইয়ের ধরণ, বোতাম ফিটিং করে লাগানো কিনা, কাপড় অতিরিক্ত পাতলা কিনা সেগুলো খেয়াল করে ভালো কাপড়টি বেছে নিন।

২। কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবেঃ কাপড়কে বেশী দিন ভালো ও সুন্দর রাখতে হলে অবশ্যই কাপড় পরিষ্কার রাখতে হবে। কাপড়কে ভালো রাখতে হলে যত্নের সাথে কাপড় পরিষ্কার করতে হবে। কাপড় কেনার সময় শার্ট বা ব্লাউজের কলারের নিচে একটি টোকেন এ এর ধোয়ার নির্দেশিকা দেয়া থাকে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী কাপড় পরিষ্কার করলে কাপড় বেশী দিন ভালো থাকে।

যদি নির্দেশিকা না থাকে-
সুতি কাপড়- হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর হাতে কেঁচে কাপড় উল্টোদিক করে শুকাতে দিন।
সিল্কের কাপড়- ঠান্ডা পানিতে হালকা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ১০-১৫ ভিজিয়ে রেখে আলতো করে কেঁচে হালকা রোদে অথবা ছায়ায় শুকাতে দিন।

৩। প্রাত্যাহিক কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ দৈনিক গোসল করুন, সুগন্ধি ব্যবহার করুন এবং উপযুক্ত অন্তর্বাস ব্যবহার করুন। এই অভ্যাসগুলো আপনার কাপড়কে পরিষ্কার ও ভালো রাখবে।

৪। বেসিক মেরামতের পদ্ধতি জেনে রাখুনঃ কাপড়কে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে হলে নিজেই কিছু ছোট খাট কাজ শিখে নিন। যেমন- বোতাম লাগানো, জিপার লাগানো, লুজ থাকলে তা নিজেই সেলাই করে নিন। এতে আপনার টাকাও বাচঁবে।

৫। সতর্কতার সাথে কাপড় আয়রণ করুনঃ কাপড় ইস্ত্রি করার পদ্ধতি নির্ভর করে কাপড়ের ধরণের উপর। একেক ধরণের কাপড় একেক রকম ভাবে ইস্ত্রি করতে হয়। তাই ইস্ত্রি করার সঠিক পদ্ধতিটি জানা দরকার। সঠিক নিয়মে ইস্ত্রি না করলে অনেক সময় কাপড় পুড়ে যায় অথবা কাপড়ের রঙ জ্বলে যায়। কাপড় ইস্ত্রি করার সময় উল্টোদিক করে ইস্ত্রি করবেন।
একেক ধরণের কাপড় একেক তাপমাত্রা আয়রন করতে হয়। আয়রন করার সময় ইস্ত্রির তাপমাত্রা নিচের অনুযায়ী করে রাখবেন-
• লিলেন- ৪৪৫০ ফারেনহাইট
• কটন- ৪৪০০ ফারেনহাইট
• ভিসকচ/রেয়ন- ৩৭৫০ ফারেনহাইট
• উল- ৩০০০ ফারেনহাইট
• এক্রাইলিক- ২৭৫০ ফারেনহাইট
• পলিষ্টার- ৩০০০ ফারেনহাইট
• সিল্ক- ৩০০০ ফারেনহাইট
• এসিটেড- ২৯০০ ফারেনহাইট
• লিক্রা- ২৭৫০ ফারেনহাইট
• নাইলন- ২৭৫০ ফারেনহাইট
6। কাপড়কে উল্টিয়ে পালটিয়ে পরিষ্কার করুনঃ মাঝে মাঝে কাপড়কে উল্টিয়ে ধৌত করুন। তাহলে কাপড় ঝলমলে আর পরিপাটি থাকে। রোদে শুকানোর সময়ও সবসময় কাপড়ের উল্টোদিক করে দিন। এতে কাপড়ের রঙ ঠিক থাকে।
বিশেষ করে বাচ্চাদের কাপড় এবং দামী ভারী ট্র্যাডিশনাল কাপড় শুকানোর সময় এই বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। কারণ, এই সব কাপড় কড়া রোদে শুকালে রঙ জ্বলে যায়।

৭। কাপড় সংরক্ষণ করাঃ অনেকদিন পর্যন্ত ময়লা কাপড় জমিয়ে রাখবেন না। পরিষ্কার করে সেলফে, ড্রয়ারে অথবা আলমারিতে সংরক্ষণ করুন। জ্যাকেটের জিপারগুলোকে কয়েকদিন পর পর মোম দিয়ে ঘষবেন অথবা নারিকেল তেল দিয়ে রাখেবন। নাহলে জিপারে জ্যাম হয়ে যায়। কয়েকদিন পর পর আলমারির কাপড় বের করে ১-২ ঘন্টা রোদে দিয়ে আবার আলমারিতে সংরক্ষণ করুন।

৮। বিবর্ণ কাপড়কে রঙ করাঃ বেশীদিন জিন্সের কাপড় পরার পর কাপড় বিবর্ণ হয়ে যায়। অনেক সময় ধোয়ার ফলেও জিন্সের কাপড়ের রঙ চলে যায়। রঙ যাওয়া জিন্সের কাপড়কে আপনি নিজেই রঙ করিয়ে নিতে পারেন।
আপনার কাছের দোকান থেকে একটি লন্ড্রি সাবান নিয়ে আসুন। একটি বালতিতে পানি নিন এবং এর গায়ে লিখা নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। কাপড়ের রঙ নিতে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে শুকিয়ে নিন। এতে আপনার প্রিয় কাপড়টিকে ফিরে পাবেন ঝলমলে রুপে।
সাধারণত, গার্মেন্টস এর সলিড রঙ ব্যবহার করলে, কাপড়ের পারফেক্ট কালার ফিরে পাওয়া যায়। যে রঙের কাপড় রঙ করবেন, সেই রঙের সলিড রঙ ব্যবহার করবেন।

৯। হেয়ার-স্প্রে এবং মেকাপ করার পর জামা কাপড় পরুনঃ ছেলেদের কাপড়ের তুলনায় মেয়েদের কাপড় বেশী নষ্ট হয়। কিন্তু কেন? কারণ, মেয়েদের কসমেটিক এবং অলংকার।
যেমন- হেয়ার-স্প্রে তে যে ধরণের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, তাতে কাপড়ের রঙ বিলীন হয়ে যায়। অনেক সময় অলংকারের জন্য শাড়ী, ওরনা, কামিজ ইত্যাদির সুতা ওঠে যায় এবং কাপড়টি কুঁচকে যায়।
জামা কাপড়ে বডি-স্প্রে দূর থেকে করবেন, যাতে এক যায়গায় ছোপ না হয়ে যায়। বাসায় হেয়ার-স্প্রে, বডি-স্প্রে দেয়ার সময় এবং মেকাপ করার সময় পুরোনো কাপড় পরে নিবেন। আপনার সুগন্ধি ব্যবহার করার অভ্যাস থাকলে ইস্ত্রি করার আগে কাপড়ে সুগন্ধি দিয়ে ইস্ত্রি করবেন। এতে কাপড়ে অনেক দিন সুগন্ধ থাকবে।

১০। ড্রায়ার ব্যবহার করুনঃ কাপড়ের যত্নের জন্য যে জিনিসটি আপনার ঘরে রাখবেন সেটা হল ড্রায়ার। এই যন্ত্রটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে আপনার কাপড় পুড়ে যেতে পারে এবং কুচঁকে যাওয়া, রঙ বিবর্ণ হওয়ার কারণ হতে পারে। এই যন্ত্রটির সুবিধা অনেক। কিন্তু এর বড় সুবিধা হচ্ছে আপনার সময় বাচাঁবে।
এর থেকে ভালো ফলাফল পেতে হলে আপনাকে প্রথমের ড্রায়ারের সেটিংস ঠিক রাখতে হবে। যেমন- তাপমাত্রা সময় এবং শোষণ ক্ষমতা ইত্যাদি। যদি তাপমাত্রার সেটিংস না থাকে তাহলে ১৫ মিনিট নরমাল মোডে রেখে লন্ড্রি রেক-এ শুকাতে দিন। ড্রায়ার বিভিন্ন ধরণের ফেব্রিক্সের কাপড় যেমন- ডেনিম, জিন্স ইত্যাদির জন্য উপযুক্ত।
আমাদের এই প্রবন্ধটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কাপড়ের যত্নের আরো চমৎকার টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।