পোশাক আমাদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম একটি। দৈনন্দিন জীবনে পোশাকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কোন অনুষ্ঠান বা ঈদের দিনে আমরা সাধারণত একটু দামি আর ঝকঝকে পোশাক পরে থাকি।

দামি আর ঝকঝকে পোশাক আমরা প্রতিদিন পরে থাকি না। বিশেষ দিন বা বিশেষ সময়ে পরি এবং পরে আলমারিতে রেখে দেই। আলমারিতে রাখার আগে কাপড়গুলোকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে যত্নসহকারে রাখতে হয়। তা নাহলে আপনার প্রিয় দামি কাপড়টি নষ্ট হয়ে যাবে।
তাই আপনার পোশাকটি কেনার পর দীর্ঘ দিন সুন্দর এবং পরিপাটি রাখতে সঠিক যত্নের প্রয়োজন। সব ধরণের কাপড়ের যত্ন এক রকম হয়না।
একেক ধরণের কাপড়ের যত্ন একেকরকম হয়।

আসুন এখন আমরা কিছু কাপড়ের যত্ন নেবার পদ্ধতি জেনে নিই-

উলের কাপড়
ধোয়ার পদ্ধতিঃ সব ধরণের উলের কাপড় ধোয়া যায় না। সিনথেটিক, এক্রাইলিক, কটন এই জাতীয় কিছু উলের কাপড় ধৌত করা যায়। আপনার বাসায় ওয়াশিং মেশিন থাকলে ওয়াশিং মেশিনে ধৌত করতে পারেন। উলের কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ধোয়ার সময় ওয়াশিং মেশিন ‘উল মোড’- এ রাখতে হবে।

ওয়াশিং মেশিন না থাকলে প্রথমে ঠান্ডা পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর আলতো করে হাতে কেঁচে ধুয়ে নিতে হবে। যদি কোন দাগ থাকে লেবুর রস দিয়ে ঘষে নিবেন। মনে রাখতে হবে বেশী জোরে নিংরানো যাবে না।

তারপর হালকা রোদে অথবা ছায়ায় শুকাতে দিন। কড়া রোদে উলের কাপড় শুকাবেন না।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ ভাঁজ করে ড্রয়ারে রাখুন। তবে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে আলমারিতে রাখা উত্তম।
মেরামত পদ্ধতিঃ ছোট কোন ছেঁড়া থাকলে আপনার নিজের সুইয়িং মেশিনে সেলাই নিবেন যদি আপনি সেলাই কাজ পারেন আর আপনার বাসায় সুইয়িং মেশিন থাকে। তা নাহলে দোকানে নিয়ে সেলাই করে নিয়ে আসুন। এটাই হবে সবচেয়ে নিরাপদ।
জিন্সের/ডেনিমের কাপড়
ধোয়ার পদ্ধতিঃ ডেনিম/জিন্সের কাপড় ধৌত করার সময় কাপড়ের লেবেলের সাথে থাকা নির্দেশাবলী দেখে নিন এবং নির্দেশাবলী অনুযায়ী ধৌত করুন। ওয়াশিং মেশিনে ডেনিমের কাপড় ধুবেন না। ঠান্ডা পানিতে হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুবেন। জিন্স ধোয়ার সময় কখনো ব্লিচ ব্যবহার করবেন না।

কারণ, এতে জিন্সের কাপড়ের রঙ নষ্ট হয়ে যায়। কড়া রোদে জিন্সের কাপড় শুকাবেন না, হালকা বা মৃদু রোদে জিন্স কাপড় শুকাবেন।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ জিন্সের কাপড় আদ্র যায়গায় রাখুন। তা নাহলে কাপড়ে স্যাতঁস্যাতেঁ গন্ধ হয়ে যায়। জিন্সের কাপড় পরে বাহিরে যাওয়ার আগে কাপড়টিকে পলিথিন কাগজে মুড়িয়ে ১৫ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন। দেখবেন গন্ধ চলে গেছে।
মেরামত পদ্ধতিঃ ছেঁড়া অথবা ফোঁড়া অংশ ঠিক করার জন্য মুড়িঁ দিয়ে সেলাই করবেন।
লেদারের কাপড়
ধোয়ার পদ্ধতিঃ লেদারের জ্যাকেট পানি দিয়ে ধুবেন না। বছরে ২/১ বার ড্রাই ওয়াশ করে নিবেন। আর মাঝে মাঝে হালকা রোদে দিয়ে ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে দিবেন। দাগ দূর করার জন্য হালকা সাবান দিয়ে আলতো করে ঘষবেন। ঝুলিয়ে রোদে দিবেন।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ লেদারের জ্যাকেট অবশ্যই আলমারিতে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখবেন।
মেরামত পদ্ধতিঃ হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে আলমারিতে রেখে দিন। লেদারে জ্যাকেট বেশী দিন ব্যবহার না করার ফলে জ্যাকেটের জিপারে জ্যাম হতে পারে। তাই মাঝে মাঝে মোম দিয়ে ঘষে নিবেন অথবা নারিকেল তেল দিয়ে রাখবেন। এতে জিপার ইজি হয়ে যায়।

টি-শার্ট
ধোয়ার পদ্ধতিঃ টি-শার্টে জমে থাকা ঘামের কারণে ব্যকটেরিয়া হতে পারে। তাই টি-শার্টটি নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখতে হবে। আপনার বাসায় ওয়াশিং মেশিন থাকলে ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে নিতে পারেন। না থাকলে, ঠান্ডা পানিতে ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ৩০ মিনিট টি-শার্ট ভিজিয়ে রাখুন।

মনে রাখবেন, বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট একসাথে ভিজাবেন না। এতে এক কাপড়ের রঙ অন্য কাপড়ে লেগে যেতে পারে। হালকা রঙের টি-শার্ট হালকা রঙের কাপড়ের সাথে এবং গাঢ় রঙের টি-শার্ট গাঢ় রঙের কাপড়ের সাথে ভিজাবেন। টি-শার্টের কলারে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে ব্রাশ ব্যবহার করুন। ৪০-৪৫ মিনিট রোদে শুকিয়ে নিন।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ ভাঁজ করে ড্রয়ারে রেখে দিন। অনেকগুলো টি-শার্ট একসাথে রাখতে হলে একটি টি-শার্টের কলার আরেকটি টি-শার্টের কলারের উল্টোদিক করে একটার উপর আরেকটা রাখবেন। এতে ভাঁজ নষ্ট হবে না। বোতাম লাগিয়ে ভাঁজ করবেন।
মেরামত পদ্ধতিঃ হালকা ছেঁড়া অংশ সেলাই করে নিবেন।
বাটন-ডাউন এবং ব্লাউজ

ধোয়ার পদ্ধতিঃ প্রথমে কলারের দিক থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সব বোতাম খুলে নিন। ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। বেশী ময়লা হলে পানিতে সোডা মিশিয়ে নিতে পারেন।

ওয়াশিং মেশিনে ধুইলে মেশিন নরমাল মোডে রাখুন।
আর সিল্কের ব্লাউজ হলে ঠান্ডা পানিতে বেবিদের সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে দিন। কাপড়কে সফট রাখতে সামান্য কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ শুকানো কাপড় ইস্ত্রি করে নিন। ড্রয়ারে অথবা আলমারিতে রেখে দিন।
মেরামত পদ্ধতিঃ বগলের নিচে বলিরেখা জমে গেলে ধোয়ার সময় হালকা গরম পানিতে সোডা ব্যবহার করতে পারেন।

বোতাম খুলে গেলে সুই সুতা দিয়ে নিজেই সেলাই করেন নিন। আর না পারলে দোকান থেকে সেলাই করে নিন।
প্রবন্ধটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের এই টিপসগুলো যদি আপনাদের একটু হলেও কাজে লাগে তাহলেও আমরা সার্থক। কাপড়ের যত্ন নেয়ার আরো দারুণ সব টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।